গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের তৎপর্য আর দশটি গ্রামের কালুয়া ফিরে এলো গ্রামে খুশি গ্রামবাসীরা, কে এই কালুয়া ?দেখুন বিস্তারিত

Bangla circle news

সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: রঞ্জিত কুন্ডু

আট-দশটি গ্রাম দাপিয়ে বেড়াত ‘কালু’। কারও কোনও ক্ষতি করত না। ভালোবেসে যে যা খাওয়াতেন, সেটাই খেত। সবার বড্ড মায়া পড়ে গিয়েছিল তার উপর। সেই ‘কালু’কে কি না ধরে বেঁধে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে হাটে। তার দামও উঠেছে বিস্তর—প্রায় ৫০ হাজার টাকা!


ঘটনাটি আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে ‘কালু’র অবাধ বিচরণ ভূমিতে। প্রতিটি গ্রামের মানুষের জোট বেঁধে হাজির হন পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে। সবাই দাবি জানাতে থাকেন, যে ভাবেই হোক তাঁদের প্রিয় ‘কালু’ ফিরিয়ে আনতে হবে। শেষে প্রধানের হস্তক্ষেপে ‘কালু’কে বর্ধমানের হাট থেকে ফিরিয়ে আনা হল। তাতে বেজায় খুশি ওই আট-দশটি গ্রামের বাসিন্দারা। ঘটনা ঘটেছে সোনামুখীর মানিকবাজার গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত কৃষ্ণবাটি এলাকায়।


‘কালু’ আসলে একটি ষাঁড়। সে পাত্রসায়রের বীরসিংহ থেকে শুরু করে সোনামুখীর মানিকবাজার গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরে বেড়াত। গ্রামের বাসিন্দারাও তাঁকে শিবের বাহন হিসেবে ঠাকুরের ষাঁড় বলে মান্য করতেন। অভিযোগ, ক’দিন আগে কৃষ্ণবাটি গ্রাম থেকে ‘কালু’কে একটি লরিতে উঠিয়ে নিয়ে যেতে দেখে স্থানীয় কিছু যুবক। তাঁরা প্রতিবাদও করেন। যদিও তাঁদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে কয়েকজন গোরু ব্যবসায়ী ‘কালু’কে নিয়ে চলে যায়। ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। তাঁরা দলবেঁধে এর বিহিত চেয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের দ্বারস্থ হন।
কৃষ্ণবাটি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, ঠাকুরের ষাঁড় ভেবে ‘কালু’কে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই যত্ন করে খাবার দিয়ে আসছি। কিন্তু, বেশ কিছুদিন ধরে ‘কালু’ অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দেয়। মানুষজনকে তেড়ে মারতে আসছিল। কালুর গুঁতোয় ইতিমধ্যে কয়েকজন জখমও হয়েছেন। জমির ফসলও নষ্ট করছিল। সেজন্য গ্রামের সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে কালুকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও এনিয়ে আপত্তি ওঠায় কালুকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে তাকে প্রধানের হেফাজতে রাখা হয়েছে।
মানিকবাজার গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান প্রদীপ মাল বলেন, ‘কারও ব্যক্তি মালিকানাধীন না হওয়া সত্বেও কালুকে বিক্রি করা হয়েছে। এনিয়ে অভিযোগ আসে। সোশাল মিডিয়াতেও এনিয়ে সমালোচনা হয়। তারপরেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ব্যবসায়ীরা কালুকে বর্ধমানের কোনও একটি হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে কালুকে আমার গ্রাম নারায়নসুন্দরীতে রাখা হয়েছে। তাকে কোনও গোশালায় রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’


গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, কালু পাত্রসায়রের বীরসিংহ গ্রামে ছিল। সেখান থেকে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে সে ঘুরে বেড়াত। ঠাকুরের ষাঁড় ভেবে তাকে সকলেই খাবার দিত। এভাবেই বিভিন্ন গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে কিছুদিন আগে সে কৃষ্ণবাটি গ্রামে চলে আসে। সেখানকার মানুষজনও তাকে যত্ম করত। কালু ইদানীং কৃষ্ণবাটি গ্রামেই বেশি সময় থাকছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কালুকে গোরু ব্যবসায়ীরা লরিতে চাপিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কালুকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে গ্রামবাসীদেরকে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানালেও তাঁরা আমল দেননি। তাই প্রধানের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে কালুকে বর্ধমানের হাট
থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা
করেছেন

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *