বাউল গানের প্রেমের টানে জাপানি মহিলা রয়ে গেলেন মনের মানুষ আখরায়।

Bangla circle news

বর্ধমান থেকে কিছুটা দূরে হাট গোবিন্দপুর গ্রাম, ধুলো মাখা পথ ধান মাঠ গাছপালা আর চারিদিকে মুখর পাখির কাকলি। দূর থেকে ভেসে আসে, রাখালিয়া বাঁশির সুর ও তারই মাঝে একটি নিভৃত আশ্রম। আষাঢ়ের পড়ন্ত বিকেলে সে আশ্রমের নিকনো উঠোনে বসে বাটি দিয়ে নারকেলের শুকনো পাতা ছাড়িয়ে কাঠি বের করে রাখছেন এক জাপানি যুবতী। নিত্য ব্যবহারের ঝাঁটা তৈরি হবে বলে। সকাল থেকে করেছেন রান্নাবান্না কাজ মাটির উনুন আর কাঠের জ্বালানিতে। বাউল ফকির কথা বইয়ের হাট গোবিন্দপুর এর এই আগ্রার কথা লেখা আছে।

নাম তার মাকি কাজুমি জন্ম ১৯৫৯ এ জাপানের ওসাকা শহরে, বাবা তেরুও কাজমি মা হিরোকা কাজমি আর একমাত্র ভাই সিনসুকো, সেখানে পড়াশোনা করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ অসম্পূর্ণ রেখে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে, জাপানেই যুক্ত হয়েছিলেন কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। সেই সূত্রে 1988 তে কাজুমি প্রথমবার ভারতে এসেছিলেন এক মাসের জন্য। এরপর ১৯৯১ এ পশ্চিমবঙ্গ থেকে জাপানে গিয়েছিলেন দু একটি সাংস্কৃতিক দল। একটি দল পুরুলিয়ার গম্ভীর সিং মরার ছৌ নাচের, অন্যটি সাধন দাস বৈরাগ্যের বাউল গানের। প্রায় দেড় মাস তারা জাপানে ছিলেন। সাধন দাস বৈরাগ্য আজ বাউল গানের জগতে পরিচিতি নাম। সাধন জন্মেছিলেন বর্ধমানের শ্যামসুন্দর এর কাছে মুক্তিপুর গ্রামে। স্কুলের পড়াশোনা ক্লাস ৫ পর্যন্ত শৈশবের দিনগুলো কাটতো বাউল গানের ও স্বেচ্ছা সেবির মাধ্যমে।

১৯৯১ এর সেপ্টেম্বর মাসে জাপানে ওসাকায় সান্ধ্য গানের আসরে গাইছিলেন এই সাধন দাস বাউল। মূলত বাংলা দেহতত্ত্বের গান শ্রোতারা প্রায়ই সকলেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। গান শোনার পর এক যুবতী তার নাম মাকি কাজুমি গানের ভাব বেশে বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলে উঠলেন আমি বাউল হব । সঙ্গে সঙ্গে সাদন দাস বৈরাগ্যর সাথে মাকি কাজুমি বাউল গান শিখবো বলে পথ চলা শুরু করে।
কাজুমি আর সাধনের স্বপ্ন ছিল ছোট্ট একটি আখড়া করে তুলবেন জয়দেব কেন্দুলীতে। এবং ২০০২ সালে এই চিন্তাভাবনায় বাস্তবের মনের মানুষ নামকরণের সাথে সাথে আশ্রম প্রতিষ্ঠিত করা হলো। রূপান্তরিত করল,ইলামবাজার থেকে পায়ের,আকম্বা হয়ে মেলা যাওয়ার পথে রামপুরের মাঠের মাঝে তাদের অনারম্ভ আখড়াটির নাম ‘মনের মানুষ। শুধু মেলার সময় নয়, মাঝেমধ্যেই তাদের দেখা মেলে আশেপাশের গায়ে গঞ্জে বাউলবোষ্টমদের আখড়াই। কয়েক বছর আগে অজয় নদীর তীরে অযোধ্যা গ্রামের আখড়ায় দেহা বাসনের পর যখন মাটি দেওয়া হচ্ছিল বিশ্বনাথ দাস বাউল কে আর পাঁচজনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে নাম গান করছিলেন মাকি কাজুমি। এই মধুময় ধূলি ধূসর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন সাধন দাস বাউল নিজেই।
শুধু পড়ে রইল তারই সিটির অজয় নদীর তীরে মনের মানুষ আখড়া, যেটি বীরভূম জেলার ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব কেন্দুলী ধামে অবস্থিত। মা কি কাজুমির ও তার শিষ্য তন্ময় ওরফে বাপি তত্ত্বাবধানে মনের মানুষ আখড়া এখনো পর্যন্ত একই সজ্জায় অবস্থিত আছে। আজও সেই জয়দেব কেনুলিতে মনের মানুষ আখড়ায় সাধন দাস বৈরাগ্য ও মা কি কাজুমির গানের সুর পাখির কলরব গোটা আখড়া জুড়ে ভেসে আসে। পৌষ মেলায় বাউল গানের আসরে মঞ্চে উঠে গান গাইতে মা কি কাজুমিকে অনেকবারই দেখা গেছে।।

জয়দেব কেন্দুলী থেকে জয়ন্ত মন্ডলের রিপোর্ট বীরভূম।।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *