নিজস্ব প্রতিবেদন :সুপার ফুড হওয়ায় যে কোনও মরশুমেই ডিম খাওয়া যেতে পারে। ডিমে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা-3 থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। সেই কারণেই বহু লোক ডিম খান। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে নকল ডিম বিক্রি করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে চলছে ছেলে খেলা। এর ফলে স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে।দেশে সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন হয় অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে। শুধুমাত্র হায়দরাবাদেই প্রতিদিন ৭৫ লাখ ডিমের চাহিদা রয়েছে। ডিমের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে দিন দিন বাড়ছে নকল ডিমের ব্যবসা। তাই ডিম কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহককে সতর্ক থাকতে হবে। মাথায় রাখতে হবে নকল ডিম বেশি চকচকে হয়। নকল ডিম তৈরিতে এর খোসায় প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। তাই নকল ডিম আগুনের কাছে রাখলে ডিম থেকে পোড়ার গন্ধ আসবে এবং আগুনও ধরে যেতে পারে। কিন্তু আসল ডিমের বাইরের খোসা হয় কিছুটা খসখসে। এই চকচকে দেখে অনেকেই ডিম কিনে ফেলে ঠকে।আসল ডিমের ক্ষেত্রে হাতে নিয়ে নাড়ালে ভেতর থেকে কোনও শব্দ পাওয়া য়াবে না। কিন্তু নকল ডিম হাতে নিয়ে ঝাঁকালে কিছু শব্দ পাওয়া যাবে। তাই ডিম কেনার আগে অবশ্যই গ্রাহককে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই নকল ডিম খেলে স্বাস্থ্য হানির আশঙ্কা থেকেই যায়। শহরে গড়ে প্রতি দিন প্রায় দেড় কোটি ডিম বিক্রি হয়। যা কিনা দেশের অনেক শহরের তুলনায় প্রায় ডবল। তাই দেখে নিয়ে কিনুন, সুস্থ থাকুন।
একের পর এক বিষ্ণুপুরে গায়েব হয়ে যাচ্ছে বাঁধ কাঁটা হচ্ছে জঙ্গল দেখুন বিষ্ণুপুরের তাপমাত্রা।
বিষ্ণুপুরের কাজুলি বাঁধ, মহামান্য ভদ্রলোকগন অদৃশ্য করেছেন। পোকা বাঁধের যে রাস্তায় গাড়ি আসে। সেই রাস্তাই হলো,কাজুলি বাঁধের পাড়। পোকাবাঁধের অবস্থাও কেরোসিন। পাড়ে বসানো হয়েছে পাইকারি মাছের বাজার।এটি ধিরগতিতে পোকাবাঁধ কে গ্রাস করে চলেছে একদল শয়তান। জমুনাবাঁধ ছিল সবার বড় বাঁধ । সেখানেও জমি মাফিয়া চতুর্দিকের থেকে বিক্রি করে দিয়েছে। যে টুকু দেখা যাচ্ছে। তা মাটি দিয়ে বোঝানো হয়েছে। উপরে কচুরিপানার চাষ। একটা ঐতিহাসিক ঐতিহ্যবাহী বাঁধ কার কার পৈতৃক সম্পত্তি ! শ্যাম বাঁধ মৃত প্রায়। কিষ্টবাঁধ তাঁর ১২টা বাজিয়েছে মৎস্য দপ্তর। বিষ্ণুপুরের রাজারা বিষ্ণুপুরের মানুষের জল কষ্টের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রচুর বাঁধ করেছিলেন। আর আজ নেতা নেত্রীদের একটা বড় অংশ মালকড়ি খেয়ে জমিদালালদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আহা কি যে বলেন ! বিষ্ণুপুরের রাজারা মানুষের ভালো করে গেছেন,আর নেতা নেত্রীদের একটা বড় অংশ ঘুষ খেয়ে নিজের আখের গুছাতে লেগেলেন। ওটা লাল বাঁধ ! ১৬ আনার ১৪ আনা খেয়ে ফেলেছেন জমিদালালরা। সবকিছুই খুইয়ে বিষ্ণুপুরের অগণিত মানুষ পেল ভারতবর্ষের সেরা দ্বিতীয় স্থানে উচ্চ তাপমাত্রায় ৪৪’১° সেলসিয়াস। এটি বিষ্ণুপুরের মানুষের স্বার্থে বড় রকমের আঝুড়া বাঁশ। সত্য সত্যই বিষ্ণুপুরের জমি মিফিয়া/বালি মাফিয়া/ বন ধ্বংসকারিদের পা’জোড়টায় শত কোটি প্রনাম।
হাওড়া ও কলকাতার বাস রুটের ইতিহাস সন্ধানে অনিকেত ব্যানার্জী
অভিজিৎ হাজরা, হাওড়া :-
সবাইকে লুকিয়ে এক দূর্দান্ত কাজ করছেন হাওড়া শিবপুরের বাসিন্দা অনিকেত ব্যানার্জী।এক রকম গবেষণাই ! তিনি যে কাজটি করছেন সেই সব বিষয় নিয়ে মাঝে মধ্যেই টুকটাক লেখালেখি ও করেন। তবে তার গবেষণার বিষয় হল বায়োটেকনোলজি। বর্তমানে অনিকেত ব্যানার্জী থাকেন গুয়াহাটিতে। তিনি বায়োটেকনোলজি নিয়ে পি, এইচ,ডি করেছেন।আই আই টি গুয়াহাটিতে মনোযোগ সহকারে গবেষণাপত্র লিখছেন। গুয়াহাটিতে থাকলেও অনিকেতের মন পড়ে আছে হাওড়া -কলকাতায়। তিনি লুকিয়ে যে গবেষণার কাজটি করছেন সেটি হল হাওড়া ও কলকাতার প্রাচীন বাস রুটের সন্ধান করা।আর এই বিষয়ে সন্ধান করতে গিয়ে ১০০ বছরের বাস রুটের সন্ধান যেমন পেয়েছেন তেমনই ৭০ থেকে ৮০ বছরের পুরনো বাস রুটের ইতিহাস পেয়েছেন।
এই বিষয়ে তিনি যতই জানছেন ততই জানার আগ্ৰহ বাড়ছে।বিস্ময় ও বাড়ছে।আগ্ৰহ ও বিস্ময় বাড়তে বাড়তে তিনি তৈরি করে ফেলেছেন বাসের উইকিপিডিয়া।থুড়ি, তিনি তৈরি করে ফেলেছেন বাস – ও – পিডিয়া। এ থেকেই জানা যাবে আমাদের পূর্বসূরিদের বাস চলাচলের ইতিহাস। অনিকেত ব্যানার্জী জানালেন, এই বছরই রামরাজাতলা থেকে ধর্মতলা রুটের ৫২ নম্বর বেসরকারি বাসটি ১০০ বছরে পড়েছে।এর আগে আব্দুল সোভান নামে এক ব্যক্তি ১৯১৮ সালে দু ‘ টি বাস কিনে একটি শিয়ালদহ থেকে বেলেঘাটা এবং অন্যটি খিদিরপুর থেকে মেটিয়াবরুজ রুটে বেসরকারি ভাবে চালাতেন।১৯৩১ সালে চালু হয় ৫১ নম্বর রুটের বাস।১৯২৮ সালে শ্রীরামপুর থেকে বাগবাজার রুটের ৩ নম্বর বাসটি চালু হয়।১৯২৬ সালে কালিঘাট থেকে শ্যামবাজার রুটের ২ নম্বর লেখা ডবল ডেকার বাসটি চলতে শুরু করে। কলকাতার ইতিহাস জড়িয়ে আছে বাসের সঙ্গে।এর কারণ হাওড়ার বয়স কলকাতার বয়সের থেকেও বেশি। হাওড়ার বয়স ৫০০ বছরের ও বেশি।১০০ বছর আগে কলকাতার শহরের সমস্ত ঐতিহাসিক জায়গা দিয়ে ৫২ নম্বর রুটের বাসটি চলাচল করত।অবশ্য তখন এতটা ভিড় হত না। কলকাতায় ট্রাম চলাচল শুরু হয় ১৯০০ সালে।৭৫ বছর বয়স হল কলকাতার ইতিহাসের সি , এস , টি , সি বাসের।৬০ বছর বয়স হল সি, টি, সি বাসের।এই সব ইতিহাস জানা গেল এই বছরেই। ভুবনেশ্বরের আই, আই, টি থেকে এম টেক করেছেন অনিকেত ব্যানার্জী । উচ্চতর গবেষণার জন্য তিনি বিদেশে যেতে চাইছেন। তিনি ইতিমধ্যেই সদস্য পদ পেয়েছেন লন্ডনের ‘ রয়্যাল সোসাইটি অফ বায়োলজি ‘ -র। তা সত্ত্বে ও অনিকেত ব্যানার্জীর মন পড়ে আছে বাসের ধোঁয়া,হর্ণ,কন্ডাক্টরের হাঁক, যাত্রীদের ওঠা – নামা উপরে। প্রবহমান গঙ্গার মতোই বাস ও যেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত বয়ে চলেছে এই জনপদে। এপারের সব ভিড় নিয়ে ওপারে জানিয়ে দেওয়ার সেই ছবির ইতিহাস সংগ্ৰহ করে চলেছেন অনিকেত ব্যানার্জী ।
প্রচন্ড দাবদাহে উপেক্ষা করে পেট ভরানোর জন্য জ্বালানি সংগ্রহে আদীবাসি মহিলাগণ
ছবি – জয়দেব দেবাংশি (পাহাড়পুর)
আমাদের দেশে সহজ ও সরলতা নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে চলেছে আনন্দ প্রিয় আদিবাসী সমাজের মানুষ। জীবনে কি পেলাম আর কি পেলাম না এই নিয়ে কোন হিসাব করে না, এবং মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব পুষে রাখেনা। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ আর কাজ আর তার মাঝে ক্লান্ত দেহকে শান্ত করার জন্য মাদলের তালে নাচ গানের মধ্যে মেতে ওঠে। স্বাধীন ভারত ৭৫ বছর পার করল দেশ,বিভিন্ন উন্নয়ন সুখী কর্মকাণ্ডের মধ্যে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো এই আদিবাসী সমাজের বেশিরভাগ মানুষই অনেক পিছিনে পড়ে আছে বিশেষ করে শিক্ষা ও সমাজ সচেতনতার বাইরে। একদিন তথা দশই আগস্ট ঘন্টা করে বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালিত হয় এদের কথা ভেবে। তবে ভাবনার মধ্যে রয়ে যায় স্বাধীন রাষ্ট্র। এদের ছেলেমেয়েদের স্কুলের খাতায় নাম লেখা আছে ঠিকই কিন্তু দেখা যায় সকালবেলায় পড়া শোনা বাদ দিয়ে গুলতি হাতে ছেলের দল পাখির খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। মেয়েরা স্কুলের পোশাক পড়ে জ্বালানীর জন্য শুকনো কাঠ বা পাতা পুড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সকালে পড়তে হবে তারপর স্কুলে যেতে হবে এটা ওদের ও বাড়ির কাজ করা ও মনের মধ্যে থাকে না, বিভিন্ন মেলা ও অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েরা যায় কিন্তু দেখা গেল সেদিন বাড়ি এলোনা। ওদের বাবা মাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তোমাদের ছেলে বা মেয়ে কবে বা কখন বাড়ি আসবে? উত্তর কে জানে। কার সঙ্গে গেছে উত্তর হবে কে জানে ।এই যে অভিভাবকদের মধ্যে প্রায়ই না জানার কথা নিয়ে বয়ে চলেছে। কয়েকদিন আগে সাঁইথিয়া ব্লকের নোয়াপাড়া গ্রামে ডাইনি সন্দেহে বা পারিবারিক বিবাদের জেরে গায়ের মোড়লের নির্দেশে নেনতু হেমরম ও পার্বতী হেমরমকে পিটিয়ে মারা হল। নোয়াপাড়ার উক্ত ঘটনার পর কয়েক দিন সচেতনতা চিকিৎসা হলো বিভিন্ন মহল হতে, এদের কথা সত্যি মনে রাখতে হবে। সকাল বা বিকালে এদের ছেলেমেয়েদের পঠন-পাঠনের সমাজ সচেতনতার উপর আলোচনার ব্যবস্থা রাখতে হবে ওদের এলাকার শিক্ষিত মেয়েদের দিয়ে কঠিন কাজটি শুরু করতে হবে আর পুরনো সাক্ষরতা কর্মীদের ওদের সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে ভালো হবে তাহলে হয়তো একদিন এই সহজ সরল আনন্দ প্রিয় মানুষজন সুস্থ সুন্দর হয়ে সচেতনতার আলোয় জেগে উঠবে। সমাজের বুকে তথা স্বাধীন ভারতে।
বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের অন্তর্গত গোগড়া গ্রামের বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পাতালেশ্বর শিবের আজ রাত্রি গাজন।
বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের রাজত্বকালে যে সকল বাংলায় গাজন উৎসব শুভারম্ভ হয়েছিল তাদের মধ্যে এক এবং অদ্বিতীয় গাজন উৎসব হল গোগড়া গ্রামের পাতালেশ্বর শিবের গাজন। ৫৫ তম মল্ল রাজা গোপাল সিংহ দেব এর রাজত্ব কালে তার অধীনে ১১৩৩ বঙ্গাব্দে(ইং-1727 খ্রিস্টাব্দে) গোগড়া গ্রামে গাজন উৎসব শুরু হয় যা বর্তমানে ২৯৬ বছরে পদার্পণ করছে। গোগড়া গ্রামের মহাদেব স্বয়ং পাতাল থেকে অবতীর্ণ হয়েছেন বলেই মন্দিরের নামকরণ পাতালেশ্বর নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাই মহাদেবের কৃপাধন্য গোগড়া গ্রাম আজ দেব ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
কথিত আছে গোগড়া গ্রামের একজন অতিব ধর্ম পরায়ণ ভক্তি মার্গের সৎ ও নিষ্ঠাবান দরিদ্র ব্রাহ্মণ তিনি মহাদেবের পরম ভক্ত ছিলেন। তিনি দীর্ঘকাল যাবত ওই গ্রামে বসবাস করতেন। সেই সময় গোগড়া গ্রামে জনবসতি ছিল না বললেই চলে। ব্রাহ্মণ এক আশ্চর্য অলৌকিক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি দেখলেন এক গভীর গর্তে মহাদেবের কালো পাথরের শীর্ষস্থানটি তীব্র দেবো আলোর জ্যোতি প্রকাশ করছে চারিদিক। সেই সময় ব্রাহ্মণ মহাদেবের স্তব আরম্ভ করলেন। পরবর্তীকালে শিবের অলৌকিক তার সাথে ঘটে যাওয়া বিষয়টি তিনি সকলের নজরে আনলেন। এবং তখন থেকে গোগড়া গ্রামে গাজন উৎসব শুরু হয়। সেই সময় গ্রামবাসীদের আর্থিক সহায়তায় ও প্রচেষ্টায় সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়। মন্দিরটি চুন-সুরকির ইটের তৈরি সুবিশাল এক মন্দির। পরবর্তীকালে মন্দিরটির সংস্কার করা হয়। পরে একটি আট চালাও স্থাপন করা হয়। মন্দিরটি দেখলে যেন মনে হয় বাংলা শৈল স্থাপত্যের সঙ্গে অনেকটাই মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গোগড়া গ্রামের গাজন যে বহু পুরাতন তা বলার কোন অপেক্ষা রাখে না। জনশ্রুতি রয়েছে এই পাতালেশ্বর শিবের কাছে ভক্তগণেরা যা মনস্কামনা করেন তার ফলস্বরূপ মহাদেব সকলের মনোবাঞ্ছনা পূরণ করেন।
এই মন্দিরে অবস্থিত পাতালেশ্বর বাবা ভোলানাথের নিয়মিত আচার রীতি-নীতি মেনে নিত্য পুজো হয়ে আসছে বহু যুগ থেকেই। নিত্য পূজারী হিসেবে গোগড়া গ্রামস্থ মুখার্জি পরিবারের উপর দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। এই উল্লেখিত মুখার্জি পরিবারের কুলো পুরোহিত জয়দেব মুখার্জি দীর্ঘদিন ধরে বাবা পাতালেশ্বর শিবের মন্দিরের সেবাইত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। এবং পুজো অর্চনা করে আসছেন দীর্ঘকাল থেকেই।
চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকে কাঠি পড়তেই গোগড়া গ্রাম মেতে ওঠেন গাজন উৎসবে। বাংলার গাজন শব্দটি “গর্জন” শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী ভক্তেরা প্রচণ্ড গর্জন করেন বলে উৎসবের এইরূপ নামকরণ হয়। আবার অপর মতে, ‘গা’ অর্থে গ্রাম, ‘জন’ অর্থে জনগণ, অর্থাৎ গ্রামের জনসাধারণের উৎসব।
রঘুনাথ চক্রবর্তী, তারাশঙ্কর চক্রবর্তী ও বরেন নন্দী গ্রামের এই তিন বিশেষ ব্যক্তিগণেরা জানান। রাঢ় বাংলার অন্যতম প্রধান উৎসব ‘গাজন’ আর সেই গাজনকে কেন্দ্র করে এমন উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায় গোগড়া গ্রামের জনসাধারণের মধ্যে। প্রতিবছর বাংলা বছরের শেষের তিন দিন ধরে এই গ্রামে জাঁকজমক মহোৎসবে গাজন অনুষ্ঠিত হয়। গাজনের প্রথম দিন থেকে পাটস্নান নামে একটি প্রথা বর্তমানেও চালু আছে। এছাড়াও গামীর কাঁটা, রাজা বাটা ও মা কামাখ্যার দেবীর পুজো গোগড়া গ্রামে মধ্য রাত্রিতে প্রতিষ্ঠিত পুকুর থেকে ক্যামলা হাঁড়ির পূর্ণ জল ভর্তি ঘট নিয়ে পাঠভোক্তা হাঁড়ির সেই পূর্ণ জল উল্টো করে মাথায় নিয়ে আসার রীতি আজ ও বর্তমানে একইভাবে হয়ে আসছে। দ্বিতীয় দিনে রাত গাজন ও তৃতীয় দিন সকালে বাণফোঁড় দিন গাজন ও বিকেলে চড়ক পুজো মানুষের সমাগমে উৎসাহ ও উদ্দীপনায় অনুষ্ঠিত হয়। গোগড়ার আর্গি তোলা থেকে শিবমন্দির পর্যন্ত ভক্তেরা মাটিতে গোড়ান দিতে দিতে আসে মঙ্গল কামনার জন্য। পাতালেশ্বর শিবকে সারা বছর আগলে রাখেন ব্রাহ্মণেরা, গাজনের কদিন সেই শিব সমাজের নিম্ন কোটির মানুষের হাতে পূজা গ্রহণ করেন। এখানে কোনও ভেদাভেদ নেই, জাত নেই, কুল নেই, উচ্চবর্ণের অবজ্ঞা অবহেলা নেই। এ কদিন সবাই সমান মর্যাদায় সম্মান পায়। এখানেই শৈব সংস্কৃতির সঠিক উত্তরণ। গাজনের সময় শিব প্রকৃত অর্থে গণদেবতা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, গাজন উৎসবের দিনে দেবী হরকালীর সঙ্গে শিবের বিবাহ হয় বলে মনে করা হয়। বিবাহ উৎসবে ভক্তেরা বরযাত্রী হিসেবে অংশ নেন। গাজন উপলক্ষে ভক্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে বর্তমানে ভক্তের সংখ্যা ১৫০ থেকে ২০০ জন হয়ে থাকে। যতদিন যাবে মহাদেবের কৃপায় ভক্তে র সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে আগামী দিনে।
স্বপন পরামানিক, উত্তম ভট্টাচার্য্য, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও সমু ভট্টাচার্য্য গ্রামের বিশেষ ব্যক্তিগণরা জানান চড়ক ও গাজন গোগড়া গ্রামের এক বিশেষ উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ। গ্রামের গাজন ও চড়ক ঢাকের তালে সঙ্গে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সমারোহে খুব জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। পিঠে গামছা বেঁধে চড়কে পাক খাওয়ার প্রচলনও রয়েছে এখানে। ওন্দা র পার্শ্ববর্তী গ্রাম ছাড়াও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষের সমাগম ঘটে এই গাজনে। এছাড়াও বাঁণফোড়, আগুন সন্ন্যাসী, পঞ্চমুখী বান বিভিন্ন বাঁণফোড় হয়ে আসছে পূর্ব কাল থেকেই। গাজন উপলক্ষে গোগড়া গ্রামের এক বিশেষ ঐতিহ্যের সংস্কৃতি রয়েছে তা হল সঙ সাজার রীতি। যা দীর্ঘকাল যাবত হয়ে আসছে। বিভিন্ন দেব-দেবীর আদলে একজন শিব ও অপরজন গৌরী সেজে নৃত্য করে এবং অন্যান্য ভক্ত্যারা রামচন্দ্র, লোকনাথ, নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূতপ্রেত, দৈত্যদানব প্রভৃতি সেজে শিব-গৌরীর সঙ্গে সঙ্গে নাচতে থাকে। এই ঐতিহ্যের সংস্কৃতির মেলবন্ধনের ধারাবাহিকতা রয়েছে বহু কাল থেকেই। গোগড়া গ্রামের এই সম্প্রীতি মেলবন্ধন যেন মিলেমিশে একাকার। শিব মন্দির থেকে শোভাযাত্রা বের করে আনন্দ সমারোহে গ্রামের সকলে মিলে ওন্দা র গ্রামান্তরে ঘুরতে থাকে। চড়ক দেখতে আশা মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা থাকে চোখে পড়ার মতো। তাই গাজন ও চড়কে কেন্দ্র করে গোগড়া গ্রামে একটি মেলাও বসে। বাংলা বছরের শেষ দিনে বাংলার এই উৎসব আসলে মিলনের উৎসব। সব ভেদাভেদ ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আগে মহা-মিলনই হল এই গাজন উৎসব।
তাই মহাদেবের কৃপাধন্য ওন্দা র গোগড়া গ্রাম বাঁকুড়া জেলার মধ্যে এক পুণ্যস্থান শিব মন্দির হিসেবে বর্তমানে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।
১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল কে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন বর্তমানের প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা কুন্ডু।
নিজস্ব প্রতিনিধী:- উত্তাল বিষ্ণুপুর। স্কুল ইন্সপেক্টর ইপ্সিতা সেনও বহু কিছু তার ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরেন নতুন সভাপতি অভিজিৎ সিং কার্যভার গ্রহণ করার দিন। খাতা পত্র দাখিল করার নির্দেশ দেন। সুন্দর অভিনয়ের পাশাপাশি তাঁর কালঘাম ছুটিয়ে ছাড়েন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিশ্চুপ । সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতি কোন অভাবেই আটকানো যায়নি। আর কতদিন চলতে পারে এসব। এনাকে এনেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সভাপতি থাকাকালীন। কয়েক মাসের মধ্যেই ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাবিস। তার কিনারা হয়নি। প্রাক্তন শিক্ষাবিদ বেলা রানী দাস এবং ওই স্কুলের শিক্ষিকা প্রয়াত রীনা ঘটক তার কাছে কাগজ পত্র দাখিল করতে বললে দৌড়ে বিষ্ণুপুর থানায় দৌড়ে ঢুকে পড়েন ।মিড ডে মিলের চাল বিক্রি করা হয় দিনের পর দিন।সহ্যসিমার চুড়ান্ত জায়গায় পৌঁছাতেই বিষ্ণুপুরের মানুষ তীব্রভাবে অনুভব করতে শুরু করে স্কুলের অবস্থা খারাপ । এক বছর হলো তিনি কাউকেই পাত্তা দিচ্ছেছিলেন না । সব সময় শাসক দল কে গালিগালাজ করে বেড়াচ্ছিলেন। প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রী সহ তার সহযোগীদের চোর চোর বলে চেচিয়ে নিজেকে সাধু প্রমাণ করতে সর্বদা চেষ্টা করতেন।অতি সম্প্রতি এক ছাত্রী কে ৫ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে নবম শ্রেণীর থেকে দশম শ্রেণীতে তুলে দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে একটি ভাইরেল হাওয়া ভয়েস রেকর্ডিং থেকে। মা ৫ হাজার টাকা দোব বলেও দেননি। মেয়েটিকে পুনরায় নবম শ্রেণীতে নামিয়ে দেওয়া হয়।মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিষ্ণুপুরের মানুষের প্রতিবাদের সোচ্চার হয়ে ওঠে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় অবিলম্বে এনাকে AI/DI সাসপেন্ড করছেন না কেন ? ১) মিড ডে মিলের কর্মীদের দ্বারা প্রতিদিন তার নিজের দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার তৈরি করিয়ে নিতেন ২) অতি সম্প্রতি মিড ডে মিলের দুস্হকর্মীরা নিরাপদ ভেবে গোষ্ঠীর টাকা রেখে ছিলেন স্কুলের আলমারিতে,তা হাবিস। সিসিটিভিক্যামেরায় ছবি আছে,কেবল টাকা রাখার। বাকিটা নেই৩) আদিবাসীদের ব্যাংকের পাস বই তাদের কাছ থেকে নিয়ে তার নিজস্ব অনুগামীর কাছে রাখতেন। এখানেও দুর্নীতির অভিযোগ। ছাত্রীরা এবং তাদের অভিভাবক অভিভাবকরা প্রতিবাদ করায় হোস্টেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আদিবাসীদের মেয়েরা বিভিন্ন স্থানে কামিনের কাজ করছে।৪) ক্লাস ফাইভের ভর্তির সময় বিদ্যাসাগর একাডেমীর নাম করে টাকা তোলা হয় এবং তা বেআইনিভাবে । ৭) এবারের সরস্বতী পূজায় চাঁদা উঠে দেড় লক্ষ টাকা। পূজা উপলক্ষে ছাত্রীদের ভোগ মিড ডে মিলের চাল থেকে তৈরি করা হয়। এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর কাছে ছিল 30 হাজার টাকা।বই অছিলায় তার কাছ থেকে অছিলায় ওই টাকা দিতে নির্দেশ দেন তিনি । কিন্তু পুরো বিষয় তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন চেকের সই করবেন না বলে সভাপতি ঠিক করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন সকলকে।ঐ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী টাকা দিতে অস্বীকার করেন।৮) বিধায়ক তন্ময় ঘোষের কাছে বিষ্ণুপুরের আমজনতা অভিযোগ করলে। তিনি বলেন আমরা সব অবগত, এখন পুরোপুরি তদন্ত চলছে ঠিক সময়েই ব্যবস্থা নেয়া হবে ।৯) মহকুমা শাসক অনুপ কুমার দত্ত এ ব্যাপারে জনসাধারণকে আশ্বাস দিয়েছেন তদন্ত পুরোদমে চলছে। আমরা সমস্ত কিছুই অবগত। এরজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।১০) প্রায় প্রতিটি অভ্যন্তরীণ সভার মধ্যে প্রধান শিক্ষিকা বনাম পরিচালন কমিটির লড়াই চরমে। অভিজিৎ সিংহ বাপ্পা ঠাকুর এবং অন্যান্যরা প্রতিজ্ঞা করেছেন এর শেষ দেখেই তারা ছাড়বেন।
রজত চক্রবর্তীর কলমে। প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো আমি আজ পর্যন্ত কোনোদিন কোনো রাজনীতি করিনি। ভোট দিয়েছি পছন্দ অনুযায়ী। আমি সেই মধ্যবিত্ত যে SSC দিয়ে শিক্ষক হয়েছি এই বঙ্গে, হ্যাঁ মাইনে ভালোই পাই, হ্যাঁ বামফ্রন্ট আমলেই। আমি সেই মধ্যবিত্ত যে অধ্যাপক হয়েছি স্লেট দিয়ে, হ্যাঁ মাস্টার্স পিএইচডি এই বঙ্গেই ঠিকঠাকভাবেই করেছি, হ্যাঁ বামফ্রন্ট আমলেই। নাঃ কোনো পার্টির মিটিং মিছিলে যাইনি। হ্যাঁ স্কুল-কলেজে-অফিসে সংগঠনের চাঁদা দিয়েছি। ব্যাস্। আমি সেই মধ্যবিত্ত যে জয়েন্ট দিয়ে এই বঙ্গেই এঞ্জিনিয়র হয়েছি, এখানেই ডাক্তারি করছি। আমি সেই মধ্যবিত্ত PSC দিয়ে সরকারি চাকরি করছি। নাঃ কোনো দাদা দরকার হয়নি চিনিও না। হ্যাঁ আমি কোনো রাজনীতি করিনি করিওনা। আমি সেই মধ্যবিত্ত যে বামফ্রন্ট আমলেই ছাত্র এবং বামফ্রন্ট আমলেই প্রতিষ্ঠিত। হ্যাঁ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত আমি একটু উচ্চবিত্ত হয়েছি সেই আমলেই। আমার একটাই সমস্যা হয়েছিল। কলেজে, স্কুল বা অফিসে নেতাগুলো বড় অহংকারী। ইগোয় লাগত খুব। তর্ক করে যেন সবজান্তা! উদ্ধত, সব বোঝে তারা কিউবা থেকে গোসাবা, আমরা যেন কলাপাতার সার্টিফিকেটে চাকরি করছি। এই একটাই আমার অসুবিধা ছিল। অস্তিত্বের সংকট নয়, অস্তিত্ব সুরক্ষিত ছিল, অস্তিত্বের মানসিক সংকটে ভুগছিলাম। মধ্যবিত্ত বড় মানসিক ভাবে ত্রস্ত! আমি সেই মধ্যবিত্ত ডাল-ভাত-মাছ সুরক্ষিত রেখে, এসির সুইচ অন রেখে, তেলে-বেগুন হয়ে উঠতাম স্থানীয় নেতাদের হেক্কাড়ে! ইগোয় লাগত খুব! বিশ্বাস করুন, আমি কোনোদিন রোদে-জলে মিছিলে যাইনি, পুলিসের বাটাম খাইনি, সারারাত ধর্না দিইনি…আমি সুপ্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত নিজের ক্ষমতার বলে ( যদিও চাকরির পরীক্ষা গুলো হবার জন্য একটা সরকার ছিল)…খুব রেগে যেতাম। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে। সিপিএমের বিরুদ্ধে। আমি সুপ্রতিষ্ঠিত একজন মধ্যবিত্ত। নন্দীগ্রামের পর যখন বুদ্ধিজীবীর দল রে রে করে নেমে পড়ল রাস্তায় তখন আমিও নেমে পড়লাম রাস্তায়। শালাদের শাস্তি দিতে হবে! আমার অফিস সংগঠনের সেক্রেটারি, আমার কলেজের সভাপতি, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি শালাদের কড়কে দেওয়া দরকার। এতো বড় সাহস! দেশে আইন নেই! নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা বলে যা পারবে করবে! আমরা শিক্ষিত সমাজ গর্জে উঠলাম, দ্যাখ কেমন লাগে! বিশ্বাস করুন, ক্ষোভ উগরে দিলুম। এগারো সালে লাইন দিয়ে ভোট দিলুম দিদির পায়ে। পাড়ার অশিক্ষিত ‘পচা’কে করে দিলুম পাড়ার ক্লাবের সেক্রেটারি। বিমানবাবু বাদ। খুব আমোদ হল – শালা সাদা পাঞ্জাবী পরে দাঁত চিবিয়ে কতা! আমি সেই মধ্যবিত্ত। ব্যালকনিতে বসে মজা পেলাম বিমানবাবুর রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া দেখে আর পচার বাইকের উপর স্নিকার পা দেখে। আমি সেই মধ্যবিত্ত । আমি দশ বছরে একবার প্রশ্ন করলাম না – নন্দীগ্রামে হাজার হাজার মানুষকে যে মেরেছে তার নামের তালিকা কোথায়? আমি জিজ্ঞেস করলাম না দশ বছরে – নন্দীগ্রামের ঘটনার পর মমতা সরকারের তৈরী তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট কোথায়? আমি জিজ্ঞেস করলাম না দশ বছরে – মানবাধিকার কমিশনে দায়ের হওয়া কেসগুলির নিষ্পত্তি হল না কেন ? আমি জিজ্ঞেস করলাম না দশ বছরে- নন্দীগ্রাম নিয়ে সিবিআই রাজ্য সরকারকে কী রিপোর্ট দিয়েছে? আমি জিজ্ঞেস করিনি দশ বছরে – যে পুলিশ অফিসারেরা নন্দীগ্রাম কান্ডে যুক্ত ছিলেন তাঁদের প্রমোশন হল মমতার সরকারের আদেশে কী ভাবে? এমনকি কেউ কেউ মন্ত্রী হলেন কী ভাবে? বুদ্ধদেব বাবু বলেছিলেন, দশ বছর বাদে মানুষ বুঝবে কে গুলি চালিয়েছে? আশ্চর্য মাইরি! দশবছর যেতে না যেতেই, এ বলছে ওর গেমপ্ল্যান নন্দীগ্রাম আর ও দুষছে একে! বুদ্ধবাবুদের কথা কেউ বলছে না মাইরি! অবাক! বেড়াল বেইরে পড়েচে!! আমি সেই মধ্যবিত্ত। একটা ষড়যন্ত্রকে লালন করতে দিয়ে এবং নিজের ভুয়ো ইগোর সন্তুষ্টি করতে গিয়ে ‘আর সব ডুবে যাক’ ধারনায় পেনশনের দিকে এগিয়ে চলেছি। আজ বুঝতে পারছি, সেইদিনের ভুলের ফলে, আজ আমার ঘরেই বেকার ছেলেমেয়ে। দশ বছরে কোনো চাকরির পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে হল না। দশ বছরে শুধু ডোল হল। বেসিক উন্নতি হল না। আমি সেই প্রতিষ্ঠিত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বুঝতে পারছি সেদিনের সিঙ্গুরে কারখানা হতে পারলে আমাদের ভবিষ্যতের প্রজন্মের সুরাহা হত। আমি সেই মধ্যবিত্ত আবার আবার আরেক ধর্মের আরক পানে ছুটে চলেছি। নাঃ । এবার দাঁড়িয়ে দেখি। প্রায়শ্চিত্ত করার সময় এসেছে। আমার পরের প্রজন্মের জন্য একটা আস্তাকুঁড় বানিয়ে ফেললাম শুধুমাত্র মুহূর্তের মধ্যবিত্ত অহং এর ভুলে। ক্ষমা চাইছি। আজ প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি। এসেছি শহীদ মিনারে। বিশ্বাস করুন মেট্রো, টাইগার, গ্লোবে সিনেমা দেখতে এসেছি অনেকদিন। ব্রিগেড বা শহীদ মিনারে যাইনি কোনোদিন। মেট্রোর গলি, বিদেশি জিনিস, মুখস্থ! কিন্তু শহীদ মিনারের সামনেটায় যাইনি কোনোদিন। আজ যাচ্ছি। আমি সেই মধ্যবিত্ত যে কোনো দিন মিছিলে হাঁটিনি, স্লোগান দিইনি, আজ দিলাম শহীদ মিনারের নিচে কর্মচারীদের জমায়েতে। বিশ্বাস করুন, খুব খুব ভালো লাগছিল! একটা প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পেয়েছি, একসাথে বহু মানুষের গলার জোর যেন আমার গলায় শুনতে পেলাম। চমকে উঠেছি। আমি আবার যাবো, ছেলেকে নিয়ে যাবো, মেয়েকে নিয়ে যাবো – অন্তত দেখাতে পারব তোদের জন্য তোদের জন্যই একটা সুন্দর পরিবেশ করার জন্য আমি এই ভিতু আমি, স্বার্থপর আমি, ঘরোয়া আমি পথে নেমেছি। তোরাও চল। সবাই নামি। প্রায়শ্চিত্তর দিন আজ।